বগুড়া শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের শহর মহাস্থানগড়। সেসময় এর নাম ছিল পুর্ণ্ড্রনগর।
বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা তখন মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে। এরপর তারা বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সেখানে গিয়ে তারা বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার বিস্তার ঘটাতেন।
মহাস্থানগড়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানা গেছে, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত বাংলাদেশের সবচাইতে প্রাচীন রাজধানী শহর হচ্ছে মহাস্থানগড়। প্রাক মৌর্য যুগ, মানে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে থেকে এখানে মানব বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়।
এছাড়া মহাস্থানগড়ে পাওয়া বিভিন্ন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন হতে জানা যায় যে, কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। এই দুর্গনগরীর বাইরে উত্তর, পশ্চিম, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের সাত-আট কিলোমিটারের মধ্যে এখনও বিভিন্ন ধরণের প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে যা উপ-শহরের সাক্ষ্য বহন করে।
জানা গেছে, মহাস্থানগড়ে প্রথম খনন কাজ শুরু করেন আলেকজান্ডার কানিংহাম নামের একজন প্রতœতত্ত্ববিদ। তিনি ভারতের প্রতœতত্ত্ব জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত খননকাজ চলছে। ইতিমধ্যে দুর্গনগরীর দুর্গ ছাড়াও কিছু কিছু ভবনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করা হয়েছে।
শুরুটা কানিংহাম করলেও মহাস্থানগড়ে সবচেয়ে ভালভাবে খননকাজ শুরু হয় ১৯৯১ সালে। সেসময় ফ্রান্সের কয়েকজন প্রতœতাত্ত্বিক বাংলাদেশের প্রতœতাত্ত্বিকদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে কাজ শুরু করে।
তাদের গবেষণায় অনেক প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। যেমন ভাস্কর্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের মুদ্রা, মাটির তৈজসপত্র, পুঁতি ইত্যাদি। এছাড়া পাওয়া গেছে প্রাক মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও মুসলিম যুগের কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, রাস্তা, নর্দমা, কূপ, মন্দির, মসজিদ, তোরণ, বুরুজ ইত্যাদি।
এসব ছাড়াও সেসময়কার নগরজীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি যেমন রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রা, কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির ফলক, মূর্তিসহ মাটি ও ধাতব দ্রব্যাদি ইত্যাদি পাওয়া গেছে। এসবের অনেক কিছুই দেখতে পাওয়া যাবে মহাস্থানগড় জাদুঘরে গেলে।
No comments:
Post a Comment